Skip to main content

সোল্ডারিং (Soldering)

সোল্ডারিং (Soldering) শব্দের আভিধানিক অর্থ ঝালাই করা। ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং( Electronic Engineering) এর ভাষায় দুই বা ততোধিক পরিবাহী পদার্থ বা ধাতব পদার্থকে উত্তপ্ত সোল্ডারিং (soldering) আয়রন (বা তাঁতালে) এর সাহায্যে সোল্ডার (লিড) গলিয়ে সংযোগ করার পদ্ধতি বা কৌশলকে সোল্ডারিং (soldering) বলা হয়।

সোল্ডারিং (Soldering)


Soldering is the process of melting two or more conductive substances or metallic substances with a hot soldering iron (or welding).

সোল্ডারিং (soldering) আয়রন উত্তপ্ত করে সংযোগ স্থলে ধরে রেজিন বা ফ্ল্যাক্স এর মাধ্যমে সংযোগ পয়েন্ট বা সংযোগ স্থলকে পরিস্কার করে নিতে হয়। তবে রেজিন কোর্ড ফ্লাক্স ব্যবহার করলে আর রেজিনের প্রযোজন হয় না। সিসা ও টিনের নির্দিষ্ট অনুপাতের মিশ্রণে সোল্ডার তৈরি করা হয়। ইলেকট্রনিক ( Electronic Engineering ) কাজে ব্যবহৃত সোল্ডালে টিন ও সিসার অনুপাত ৬০ : ৪০ এবং একে সিঙ্গেল কোর তারের মতো করে তৈরি করা হয়। সোল্ডার সিলভার কালারের হয়ে থাকে।সোল্ডারিং আয়রন সঠিকভাবে উত্তপ্ত হলে সোল্ডার গলে তরল হবে উক্ত তরল সোল্ডার সংযোগস্থলে প্রলেপাকারে বা প্রয়োজনমাফিক লাগিয়ে সংযোগ বা জয়েন্ট স্থায়ী করতে হয়। ইলেকট্রনিক (Electronic) সার্কিট বোর্ডে অথাৎ পিপি বোর্ডে বিভিন্ন ডিভাইস বা ওয়্যার এি সোল্ডারিং (soldering) এর মাধ্যমে সংযোগ করা হয়।

উত্তপ্ত সোল্ডারিং আয়রনের তাপে সোল্ডার তরল হয়ে ধাতু বা পরিবাহী খন্ডের সংস্পর্শে আসে। গলিত সোল্ডার পরমাণুর ইলেকট্রনগুলো এবং ধাতব বা পরিবাহী খন্ডের ভ্যালেন্স ইলেকট্রনগুলো পরস্পরের উপর ক্রিয়া করে উভয়ের মধ্যে একটি বন্ধন সৃষ্টি হয়। দৃই বা ততোধিক ধাতব বা পরিবাহী খন্ডের সংযোগস্থলে যদি সোল্ডারের কমন একটি প্রলেপ পড়ে বা আবরন পড়ে তবে সোল্ডার ঠান্ড হলে ধাতব খন্ড বা পরিবাহী খন্ড বা ডিভাইসের টার্মিনাল বা প্রান্ত গুলোর মধ্যে একটি শক্তনবা মজবুত সংযোগের সৃষ্টি হয়। এভাবে সোল্ডার ধাতব খন্ড বা পরিবাহী খন্ডদ্বয়ের মাঝে বন্ধনের সৃষ্টি করে।List the materials needed in soldering ( সোল্ডারিং)

সঠিকভাবে সোল্ডারিং (soldering) করা জয়েন্ট বা সংযোগস্থল না ভেঙ্গে বা ডিসোল্ডারিং না করে সংযোগকৃত ধাতু বা তারকে কখনোই আলাদা করা সম্ভব নয়।

সচারাচর ব্যবহৃত ধাতু এবং তাদের সম্পকিত তথ্য:

ধাতুর নাম সোল্ডার সম্পর্কিত তথ্য 
কপার   সোল্ডার করা খুব সহজ। 
সিলভার, গোল্ড, আয়রন, স্টিল, নিকেল পরিষ্কার এবং অক্সাইড হতে মুক্ত হলে সোল্ডার করা খুব সহজ। 
অ্যালুমিনিয়াম, স্টেইনলেস, স্টিল  বিশেষ ধরনের সোল্ডার এবং ফ্লাক্স প্রয়োজন (সোল্ডার করা কঠিন) 
ক্রোমিয়াম সোল্ডার করা অসম্ভব।  


সোল্ডারিং-এ ব্যবহৃত উপাদান সমূহ এবং সোল্ডারিং করার ধাপ সমূহ (List of material needed in soldering):

১/ তার নির্বাচন এবং প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্য কর্তন: যে তার ঝালাই বা সোল্ডারিং (soldering ) করতে হবে, প্রথমে তা নির্বাচন করতে হবে এবং কাটিং প্লায়াস বা কাটার দিয়ে প্রয়োজনমতো কেটে নিতে হবে।

২/ সোল্ডারিং আয়রন,সোল্ডারিং ট্যাগ এবং লিড নির্বাচন: কাজের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (Tools) ম্যাটেরিয়ালস (Materials) নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সোল্ডারিং (solderig) আয়রন, ট্যাগ এবং লিড নির্বাচন করতে হবে। সোল্ডারিং আয়রনে সাপ্লাই দিয়ে গরম হয় কি না তা চেক করে নিতে হবে। জোড়া লাগানোর জন্য ২৫ ওয়াটের সোল্ডারিং (soldering ) আয়রন উপযুক্ত।

৩/ সোল্ডারিং ট্যাগ ও আয়রন টিপ পরিষ্কারকরণ এবং তারের যে অংশ ঝালাই করবে সেটার ইনসুলেশন অপসারণ: তকরের উপর যে অপরিবাহী পদার্থ খাকে তা চাকু বা কাটিং প্লায়ার্স বা ওয়ার স্ট্রিপার দিয়ে অপসারণ করতে হবে। সাধারনত তারে রাবারের ইনসুলেশন থাকে। তাছাড়া তারের গায়ে (কোরের গায়ে) বিশেষ ধরনের ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়াল (পদার্থের) এর প্রলেপ (আবরন) থাকে। এ প্রলেপ অপসারন বা পরিষ্কার করার জন্য ফাইল বা চাকু বা সিরিশ কাগজ ব্যবহার করা হয়।

সোল্ডারিং (soldering ) ট্যাগ ও আয়রন টিপ পরিষ্কার করে নিতে হবে, অন্যথায় আয়রন টিপে অপ্রয়োজনীয় বস্তু বা ধুলা বা ময়লা লেগে থাকলে সোল্ডার এর সাথে মিশে জয়েন্ট হবে। ফলে সোল্ডারিং (soldering ) ড্রাই বা হালকা হতে পারে এবং কারেন্ট কন্ডাকশন-এ কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

৪/ দুটি এক খেই তার যান্ত্রিকভাবে জোড়া দেয়া এবং সোল্ডারিং করণ: দুই এক খেইবিশিষ্ট তারকে জোড়া দিতে হলে প্রথমে তারদ্বয়কে প্লায়ার্স বা অন্য কোন বস্তু দ্বারা একত্র করতে হবে। তারপর সোল্ডার করতে হবে।

৫/ দুটি বহু খেইবিশিষ্ট তার (wire) যান্ত্রিকভাবে জোড়া দেয়া এবং সোল্ডারিংকরণ: বহু খেইবিশিষ্ট তার প্রথমে পূর্বের নিয়মে একত্রিত করে তারপর সোল্ডারিং (soldering ) করতে হবে।

৬/ সোল্ডারিং ট্যাগে তার ( wire) সংযোগ করে সোল্ডারিংকরণ: পূর্বের নিয়মে সোল্ডারিং (soldering ) ট্যাগের সাথে তার সংযোগ করে সোল্ডারিং (soldering ) করা যায়।

৭/ তার ও সোল্ডারিং ট্যাগ পরিচ্ছন্নকরণ: সোল্ডারিং (solderig) -এর পর সোল্ডারিং (soldering ) ট্যাগ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তারের খন্ড বা টুকরোগুলো একত্র কে সুশৃঙ্খলভাবে রাখতে হবে। সোল্ডারিং (soldering ) ট্যাগ ও পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য পরিষ্কার রাখতে হবে।

৮/ সোল্ডারিং পরিক্ষা : সোল্ডারিং (soldering ) করার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন সংযোগস্থলে কোন ফাঁক না থাকে।

৯/ জয়েন্ট পরিক্ষা: সোল্ডারিং (soldering ) করার পর সংযোগস্থল ঠান্ডা হলে জয়েন্টের দুই প্রান্তে সামান্য টান দিয়ে চেক করতে হবে সোল্ডারিং টিক হয়েছে কি না। যদি সঠিকভাবে না লাগে বা জয়েন্ট না হয় তাহলে পুনরায় সোল্ডরিং (soldering ) করতে হবে। জয়েন্ট পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখতে হবে এবং কনিক্যাল আকারে সোল্ডারিং (soldering ) করতে হবে। 

সোল্ডারিং (Soldering) করা বিভিন্ন জয়েন্ট


ক) খুব কম সোল্ডার করলে জয়েন্ট বা ঝালাই মজবুত হয় না। 

 চিত্রে (C) জয়েন্ট।

খ) খুব বেশি সোল্ডারে জয়েন্ট খারাপ হয়।

 চিত্রে (B) জয়েন্ট।

গ) কনিক্যাল আকারের সোল্ডারেই (soldering ) সঠিক জয়েন্ট।

 চিত্রে (A) জয়েন্ট।

ঘ) গোলাকার সোল্ডারিং (soldering ) এ ড্রাই সোল্ডার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 ঙ) তাপমাত্রা বজায় রাখা, কারণ ধাতব বা পরিবাহী যে কোন একটি আগে ঠান্ডা হলে সোল্ডার বা লিড শক্ত হয়ে যেতে পারে, ফলে সংযোগ নাও হতে পারে।

চিত্রে (D) জয়েন্ট ।

চ) বেশি তাপ বা গরম করার কারণে পদার্থদ্বয় পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চিত্রে (E) জয়েন্ট।

ছ) খেয়াল রাখতে হবে যেন পরিবাহী টার্মিনালদ্বয় সোল্ডার বা লিড একত্রিত হয়ে না যায়।

চিত্রে (F) জয়েন্ট।


একটি ভালো সোল্ডারিং করা জয়েন্টের বৈশিষ্ট্য সমূহ (Properties of a good soldered joint) :

একটি ভলো সোল্ডারিং (soldering ) জয়েন্টের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্ন পর্যায় ক্রমে আলচনা করা হল: The features of a good soldering joint are discussed in the following stages:

১/ সোল্ডারিং (soldering ) বা ঝালাই করার পূর্ব ঝালাই বা সোল্ডারিং এর জন্য নির্ধারিত সংযোগ স্থল ও সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রন বা নন ইলেকট্রনিক ডিভাইস অথার্ৎ যা যা সংযোগ করা হবে, তার কন্টাক্ট পিন /পা / টার্মিনাল বা প্রান্ত ভাগ ভাল ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

২/ বিভিন্ন কাজের জন্য প্রযোজ্য ওয়াটের সোল্ডারিং (soldering ) আয়রন ব্যবহার করতে হবে। যেমন ইলেকট্রনিক (Electronic) কাজের জন্য ২৫ থেকে ৪০ ওয়াটের সোল্ডারিং (soldering ) আয়রন ব্যবহার করা উচিত। 

৩/ সোল্ডারিং (soldering ) আয়রনটি ভালো ভাবে গরম করে নিতে হবে যেন সোল্ডার বা লিড ভালো ভাবে গলে যায়।

৪/ সোল্ডারিং (soldering ) আয়রনের বিটের অগ্রভাগ এবং সংযোগ স্থল রেজিন দিয়ে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 

৫/ প্রয়োজনে সোল্ডার কোর্ড ব্যবহার করতে হবে। 

৬/ অধিক পরিমাণে টিন যুক্ত অর্থাৎ টিন ও সিসার অনুপাত = ৬০ : ৪০ পরিমাণের সোল্ডার ব্যবহার করতে হবে। 

৭/ সোল্ডারিং কাজে প্রযোজন মতো সোল্ডার ব্যবহার করতে হবে। খুব বেশি বা খুব কম পরিমাণ সোল্ডার ব্যবহার করা উচিত না।

৮/ কনিক্যাল আকৃতির সোল্ডারিং (soldering ) অতি উত্তম। 

৯/ সংযোগ স্থলে কোন বায়ু ( Dry soldering) থাকতে পারবে না।

১০/ সংযোগ স্থলে সোল্ডারিং (soldering ) আয়রনটি সঠিক কোণে রেখে বা ধরে সোল্ডারিং (soldering ) করতে হবে।

১১/ সংযোগ স্থলে গরম তাঁতালটি অধিক সময় রাখা যাবে না।


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

নিউমেরিক ও কালার কোড ব্যবহার করে রেজিস্টর এবং ক্যাপাসিটরের মার নির্ণেয়ের পদ্ধতি ( The procedure of determining the value of resistors capacitor using numeric and colour code):

রেজিস্টরের মান নির্ণয়ের পদ্ধতি ( Processes of determining the value of resistors): ইলেকট্রনিক সার্কিটে ইলেকট্রনের প্রবাহকে বাধা দেয়ার কাজে যে যন্ত্রাংশ বা কম্পোনেন্ট ব্যবহার করা হয়, তাকেই রেজিস্টর বলা হয়।ইলেকট্রনিক সার্কিটে বিভিন্ন ধরনের রেজিস্টর ব্যবহার হয়, যেমন_ কার্বন কম্পোজিশন রেজিস্টর, মেটাল ফিল্ম রেজিস্টর, কার্বন ফিল্ম রেজিস্টর, ওয়্যার উন্ড রেজিস্টর ইত্যাদি। রেজিস্টর সমূহের মান নির্ণয়ের জন্য ইলেকট্রনিক (ওহমমিটার) মিটার এবং কারার কোড পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।যে সমস্ত রেজিস্টরের গায়ে নির্দিষ্ট নিয়মে৷ রং (কালার) লাগানো থাকে, ঐ সমস্ত রেজিস্টর সমূহের মান কালার কোড পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায়। তবে সকল ধরনের রেজিস্টরের মানই মিটার দিয়ে নিরচ্ণয় করা যায়। এখানে কালার কোড ব্যবহার করে রেজিস্টরের মান নির্ণয় কৌশল বিশদভাবে আলোচনা করা হলো। রেজিস্ট্যান্সের মান লিখনে পুরাতন ও নতুন পদ্ধতি : পূর্বে রেজিস্টরের মান পূর্ণ সংখ্যা বা দশমিক সরাসরি লেখা হত, কিন্তু বর্তমানে এ লেখা নীতি পরিবর্তন করে দশমিকের ব্যবহার বাদ দেয়া হয়েছে। নিচে পুরাতন এবং বর্তমানে লেখার পদ্ধতির একটি তুলামূলক ছক দেয়া হল: Table 1 প

Printed circuit board (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড)

প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড ( Printed Circuit board): প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড এ সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে PCB। এটি এক ধরনের প্লাস্টিক বোর্ড। এ বোর্ডের উপর ইলেকট্রনিক সার্কিটের লে-আউট( ওয়্যারি ডায়াগ্রাম) লিকুইড কপাল দিয়ে প্রিন্ট (Print) করা হয়। ফলে সার্কিট ডায়াগ্রাম অনুযায়ী বোর্ডের উপর কপারের প্রলেপ পড়ে, যা সার্কিটে ব্যবহৃত ডিভাইস বা কম্পোনেন্টসমূহের মধ্যে ইন্টরকানেকশন সৃষ্টি করে এবং কন্ডাকাটিং পথ হিসেবে কাজ করে। প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের প্রিন্টেড সাইডের অপর (বিপরীত) সাইডে সার্কিট কম্পোনেন্ট সমূহ থাকে এবং প্রিন্টেড সাইডে কম্পোেন্ট সমূহের Leg বা টার্মিনাল বা প্রান্ত গুলোরকে সোল্ডারিং (ঝালাই) করা থাকে। PCB বোর্ড সার্কিটের লে- আউট অনুসারে কম্পোনেন্ট সমূহ স্থাপন বা বসানোর জন্য ড্রিল বা ছিদ্র করা থাকে। কার্যপ্রণালি (ফাংশন) :  আসলে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বলতে বুঝায় কোন নির্দিষ্ট সার্কিট বা নেটওয়ার্ক এর লে-আউট (ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম) প্রিন্ডকৃত বোর্ড। নেটওয়ার্ক বা সার্কিটের ডিজাইন অনুসারে প্রয়োজনীয় সার্কিট উপাদান যেমন রেজিস্টার, ডায়োড, ক্যাপাসিটর, ট্রানজিস্টর, আইসি, তার বা কানেক্টর বা জাম্পার এর বেস ব