প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড ( Printed Circuit board):
প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড এ সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে PCB। এটি এক ধরনের প্লাস্টিক বোর্ড। এ বোর্ডের উপর ইলেকট্রনিক সার্কিটের লে-আউট( ওয়্যারি ডায়াগ্রাম) লিকুইড কপাল দিয়ে প্রিন্ট (Print) করা হয়। ফলে সার্কিট ডায়াগ্রাম অনুযায়ী বোর্ডের উপর কপারের প্রলেপ পড়ে, যা সার্কিটে ব্যবহৃত ডিভাইস বা কম্পোনেন্টসমূহের মধ্যে ইন্টরকানেকশন সৃষ্টি করে এবং কন্ডাকাটিং পথ হিসেবে কাজ করে। প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের প্রিন্টেড সাইডের অপর (বিপরীত) সাইডে সার্কিট কম্পোনেন্ট সমূহ থাকে এবং প্রিন্টেড সাইডে কম্পোেন্ট সমূহের Leg বা টার্মিনাল বা প্রান্ত গুলোরকে সোল্ডারিং (ঝালাই) করা থাকে। PCB বোর্ড সার্কিটের লে- আউট অনুসারে কম্পোনেন্ট সমূহ স্থাপন বা বসানোর জন্য ড্রিল বা ছিদ্র করা থাকে।
কার্যপ্রণালি (ফাংশন) : আসলে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বলতে বুঝায় কোন নির্দিষ্ট সার্কিট বা নেটওয়ার্ক এর লে-আউট (ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম) প্রিন্ডকৃত বোর্ড। নেটওয়ার্ক বা সার্কিটের ডিজাইন অনুসারে প্রয়োজনীয় সার্কিট উপাদান যেমন রেজিস্টার, ডায়োড, ক্যাপাসিটর, ট্রানজিস্টর, আইসি, তার বা কানেক্টর বা জাম্পার এর বেস বা লিড বা টার্মিনাল সমূহ বোর্ডের উপর ড্রইলকৃত স্থানে (ছিদ্রে) প্রবেশ করাতে হয়। তারপর কম্পোনেন্ট সমূহের টার্মিনাল বা লিড গুলোকে ছিদ্রের প্রান্তি বা ছিদ্রে স্থানের কপারের প্রলেপের সাথে সংযোগ (বা কন্টাক্ট) পায় এরুপ সোল্ডারিং ( ঝালাই) করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে বা দক্ষ হাদে ঝালাই করতে হয়। তানা হলে অতিরিক্ত তাপে কম্পোনেন্ট এর ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে যায় এবং কপার বা সিলভারের প্রলেপ উঠে যায় বা ফেটে কন্টাক্ট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একটি কম্পোনেন্ট বোর্ড বসিয়ে দ্রুত ঝালাই করা নিরাপদ। ইলেক্ট্রনিক সার্কিট কম্পোনেন্ট ঝালাই করতে ২৫ থেকে ৪০ Watt- এর সোল্ডারিং আয়রন ব্যবহার করা উত্তম। বেশি ওয়াটের তাঁতাল ব্যবহার করলে অধিক তাপ উৎপন্নের কারণে ডিভাইস ও বোর্ডর ক্ষতি সাধন হয়।
সোল্ডারিং এর পূবে সোল্ডারিং এর স্থান অথাৎ এবং ডিভাইস সমূহ লিড বা টার্মিনাল পরিষ্কার করে নিতে হবে। তামার প্রলেপ বা সিলভারের প্রলেপ আলতোভাবে স্ক্র্যাপিং করে পরিষ্কার করে হয়। আরো খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত সোল্ডার লেগে পাশাপাশি লিড (একই ডিজাইসের) দুটি যাতে শর্ট হয়ে না যায। সোল্ডারিং এক সময় বোর্ড ও অন্যান্য প্রায়োজনীয় উপাদান পরিষ্কার ও নিরাপদে রাখতে হয়।
প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড এ সার্কিট সংকুলান এবং বিন্যাস অনুসারে পিসিবিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন_
সিঙ্গেল সাইডেড প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড | ডাবল সাইডেড প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড | মাল্টিলেয়ারড সাইডেড প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড |
---|---|---|
১) যে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের একদিকে ইন্টারকানেকটিং পাথ (Path) থাকে, তাকে সিঙ্গেল সাইডেড প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড বলে। | যে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের উভয় পার্শ্বে ইন্টারকানেকটিং পাথ (Path) থাকে, তাকে ডাবল সাইডেড প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড বলে। | যে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের কয়েক স্তরে ইন্টারকানেকটিং পাথ (Path) থাকে, তাকে মাল্টিলেয়ারড প্রিন্টড সার্কিট বোর্ড বলে। |
২) ছোট কাজের জন্য এপি ব্যবহৃত হয়। | জটিল ও বড় কাজের জন্য এটি উপযোগী। | বৃহত্তর ও জটিলতার কাজের জন্য এ পদ্ধতি উপযোগী। |
৩) খুব কম কম্পোনেন্ট সংযোগের জন্য এি বোর্ড ব্যবহৃত হয়। | ৪) অল্প স্থানে বেশি কম্পোনেন্ট সংযোগের জন্য এই বোর্ড ব্যবহৃত হয়। | অল্প স্থানে কয়েক স্তর তৈরি করে আরো বেশি কম্পোনেন্ট সংযোগের জন্য এই বোর্ড ব্যবহৃত হয় |
ক) সিঙ্গেল সাইডের প্রিন্টেড বোর্ড (Single Sided Printed Board) : যে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের একদিকে ইন্টার কানেকটিং পথ (Path) থাকে, তাকে সিঙ্গেল সাইডেড প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বলে।
ব্যবহার : ছোট কাজের জন্য এটি বেশি উপযোগী এবং খুব অল্পসংখ্যক কম্পোনেন্ট (সার্কিট উপাদান) সংযোগের জন্য এই বোর্ড ব্যবহৃত হয়।
খ) ডাবল সাইডেড প্রিন্টেড বোর্ড (Double Sided Printed Board): যে প্রিন্টেড বোর্ডর উভয় পার্শ্বে ইন্টারকানেকটিং পথ (Path) থাকে, তাকে ডাবল সাইডেড প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড বলে।
ব্যবহার: জটিল ও বড় ধরনের কাজের জন্য এটি উপযোগী। অল্প স্থানে বেশি কম্পোনেন্ট সংযোগের জন্য এই বোর্ড ব্যবহৃত হয়।
গ) মাল্টিলেয়ার্ড সাইডেড প্রিন্টেড বোর্ড ( Mulit- layered Sided Printed Board): যে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ডের কয়েক স্তরে ইন্টারকানেকটিং পথ( Path) প্রিন্ট করা থাকে, তাকে মাল্টিলেয়ার্ড সার্কিট বোর্ড বলে।
ব্যবহার: বৃহত্তর এবং জটিলতম কাজের জন্য এ পদ্ধতি উপযোগী। অল্প স্থানে কয়েক স্তর তৈরি করে আরো বেশি কম্পোনেন্ট সংযোগের জন্য এই বোর্ড ব্যবহৃত হয়।
ইলেকট্রনিক সার্কিটে রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর এবং ইন্ডাক্টরের কাজ ও ভুমিকা (The functions of resistor, capacitor and inductor in electronic circuits):
রেজিস্ট্রার ( Resistor): ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সার্কিট কারেন্ট প্রবাহকে সীমিত (Limit) রাখা, নিয়ন্ত্রণ করা এবংকারেন্ট প্রবাহের পথে বাধা সৃষ্টি করাই রেজিস্টারের কাজ। সার্কিটের বিভিন্ন পথে ভোল্টেজ ড্রপ ঘটিয়ে কারেন্ট লিমিট (Limit) বা নিয়ন্ত্রণ করা রেজিস্টারের ধর্ম। আর রেজিস্টার ও পরিবাহী পদার্থের যে বৈশিষ্ট্য বা ধর্মের কারণে সেটির মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, উক্ত বৈশিষ্ট্য বা ধর্মকে রেজিস্ট্যান্স বা বোধ বলে।
সকল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ( যেমন - Radio, Television, Computer, Pinter etc) রেজিস্টর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রনিক সার্কিটে ব্যবহৃত বিভিন্ন কম্পোনেন্ট সমূহ বিভিন্ন ভোল্টেজ কাজ করে। এই কম্পোনেন্ট সমূহের চাহিদা মোতাবেক নির্দিষ্ট মানের ভোল্টেট সরবরাহ দেয়ার জন্য সাপ্লাই ভোল্টেজের পথে রেজিস্টর সংযোগ করে ভোল্টেজ ড্রপ ঘটানওর উদ্দেশ্যেেই ইলেকট্রনিক সার্কিটে রেহিস্টর ব্যবহার করা হয়।
রেজিস্ট্যান্সকে R ও r দ্বারা প্রকাশ করা হয়। রেজিস্ট্যান্স এর একক ওহম (Ohm) রেজিস্টর বিভিন্ন মানের ও আকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। রেজিস্টরের গায়ে বিভিন্ন রঙ এর ( Colour) এর ব্যান্ড দেয়া থাকে, এর রঙ দেখে আমরা ওহমমিটার ব্যবহার করে রেজিস্টরের মান নির্ণয় করতে শিখব।
ক্যাপাসিটর (Capacitor) : ক্যাপাসিটর অর্থ ধারক। ক্যাপাসিটর একটি ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস। দুটি সমান্তরালে পরিবাহীকে একটি অপরিবাহী মাধ্যম দ্বারা পৃথক করা হলে যে ডিভাইসের সৃষ্টি হয়, তাকে ক্যাপাসিটর বলে। পরিবাহী প্লেটকে ইলেকট্রোড এবং অপরিবাহী মাধ্যমকে ডাই ইলেকট্রিক (Di Electric) বলে।
সার্কিটে ক্যাপাসিটর, সোর্স থেকে বৈদ্যুতিক এনার্জি বা চার্জ সঞ্চয় করে থাকে। ক্যাপাসিটর এর বৈদ্যুতিক শক্তি বা চার্জ সঞ্চয় করা অথবা ধারণ করার এই ধর্মকে ক্যাপাসিট্যান্স (Capacitance) বলে।
ক্যাপাসিটরের Plate গুলোর মধ্যে যখন পটেনশিয়াল পার্থক্য বিরাজমান থাকে, তখন ক্যাপাসিটরটি চার্জড ( Charged) বলা হয় এবং যখন প্লেট গুলোর মধ্যে কোন পটেনশিয়াল পার্থক্য বিরাজমান থাকে না তখন ক্যাপাসিটরটি ডিসচার্জড (Discharged) বলা হয়। ক্যাপাসিটরকে আবার কন্ডেনসর ও বলা হয়। ক্যাপাসিটরের ক্ষমতা বা ক্যাপাসিট্যান্স (Capacitance) এর একক ফ্যারাড (f) বা মাইক্রোফ্যারাড এবং এর প্রতীক C। ইলেকট্রোস্ট্যাটিক উপায়ে ক্যাপাসিরের সঞ্চিত এনার্জি পরিমাণ C = Q/V সূত্রানুসারে নির্ণয় করা হয়।
এখানে C = Capacitance, Q = চার্জের পরিমাণ এবং V = পটেনশিয়াল পার্থক্য বা ভোল্টেজ।
ইন্ডাক্টর (Inductors) :ইন্ডাক্টর বা আবেশক হচ্ছে পরিবাহী তারের একটি সাধারণ কুণ্ডলী বা কয়েল (Coil)। এই কয়েল যদি কোন পরিবাহী পদার্থের উপর জড়ানো হয় তাহলে তার ইন্ডাকট্যান্স ( Inductance) বা আবেশংক বেড়ে যায়।পরিবাহী পদার্থের উপর জড়ানো তারে দৈঘ্য কম হলে ইন্ডাকট্যান্স বেশী হয়।তারের প্যাঁচানো বা জড়ানো কয়েলকে ইন্ডাকটর বলা হয়। কয়েলে কারেন্ট পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবাহী পদার্থে ভোল্টেজ (Voltage) উৎপন্ন করার সামর্থ্যকে ইন্ডাকট্যান্স বলে।
ইন্ডাকট্যান্স হল ইন্ডাক্টরের বৈশিষ্ট্য বা ধর্ম, যেখানে তড়িৎ প্রবাহের কোন তারতম্য ঘটলে তাতে সে বাধা সৃষ্টি করে। কারেন্ট প্রবাহের পরিবর্তনে ইন্ডাক্টর বাধার সৃষ্টি করে কারণ এ ধরনের পরিবর্তন চৌম্বক ক্ষেত্রে ও (Magnetic filed) পরিবর্তন হয়ে থাকে। ইন্ডাকট্যান্স (Inductance) এর একক Henry (H) এবং ইন্ডাকট্যান্সকে L দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
Comments
Post a Comment